বাঙালির জীবনের দাম কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত মেট্রো রেলের কাছে যে নেই সেটা আবার প্রমাণিত হল | তাঁর হাতের কব্জিটা বড্ড সরু ছিল, সে জন্যই নাকি দরজায় আটকে থাকা অবস্থাতেও কাজ করেনি কামরার দরজার সেন্সর। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, কব্জিটা আর একটু মোটা হলেই হয়তো বেঁচে যেতেন কসবার বাসিন্দা সজল কাঞ্জিলাল। দরজায় কিছু আটকে গিয়েছে, এরকম সিগন্যালও পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল মোটরম্যানের কাছে। তার ফলে বন্ধই হতো না দরজা, চালুই হতো না মেট্রো। সে ক্ষেত্রে ঘটত না দুর্ঘটনাও। শনিবার সজল কাঞ্জিলাল নামের এক ব্যক্তির হাত মেট্রো রেলে আটকে গিয়ে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যুর ঘটনায় এমনই যুক্তি দিলেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
সজলবাবুর ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার পরে পুলিশ কার্যত নিশ্চিত, লাইনে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই হার্ট ফেল করেন সজলবাবু। ফলে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মেট্রোর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দরজায় হাত আটকে গেলেও সজলবাবু তা বার করে নিতে চাননি। বরং দরজার বাইরে যে চার-পাঁচ ইঞ্চি জায়গা রয়েছে, সেখানে পা-ও রেখে দেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সজলবাবু সম্ভবত ভেবেছিলেন, হাত রেখে দিলে দরজা খুলে যাবে। যেমনটা হয় আর কী। সেই কারণে ট্রেন চালু হওয়ার আগে অবধিও হাত বার করার চেষ্টা করেননি তিনি।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে ভাবে সজলবাবু ঝুলছিলেন, তাতে হয়তো ওরকম ভাবেই তিনি ময়দান পৌঁছে যেতেন।কিন্তু চেঁচামেচি শুনে চালক এমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন ৬০ মিটার এগোনোর পরেই। আর তাতেই দরজা আলগা হয়ে যায় এবং ভিতরে আটকে থাকা হাতের মুঠোটা খুলে যায় সজলবাবুর। তিনি পড়ে যান লাইনে।
লাইনে পড়ামাত্র হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ স্পর্শ করে তাঁর ডান পা। তিনি মারা যান। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, যদি সজলবাবুর হাতটা কোনও যাত্রী ভিতর থেকে ধরে থাকতেন, তা হলে ও ভাবেই ঝুলতে ঝুলতে ময়দান পৌঁছে যেতেন সজলবাবু। পড়ে যেতেন না লাইনে। কিন্তু ট্রেন ছাড়ার ১২ সেকেন্ডের মধ্যে লাইনে পড়ে যাওয়ার কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কব্জি সরু বলে দরজার সেনসার কাজই করল না, এটা কি কোনও যুক্তি হতে পারে?
মেট্রোর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, নতুন রেকের দরজায় ‘ফিঙ্গার প্রোটেকটিভ রাবার লাইনিং’ থাকলেও তার প্রস্থ একটু মোটা। তবু হাত আটকে গেলে দরজা বন্ধ হওয়ার কথা নয়। আবার হাত চেপে যাওয়ারও কথা নয়। কিন্তু প্রযুক্তিগত নিয়ম অনুযায়ী, ২০ মিলিমিটার অর্থাৎ ২ সেন্টিমিটারের বেশি চওড়া কিছু আটকালেই দরজা বন্ধ হবে না। কিন্তু তার চেয়ে সরু কিছু আটকালে, সেনসর ধরতে পারবে না। ফলে চালু করার সিগন্যাল পেয়ে যাবে ট্রেন।
এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। সজলবাবুর হাতের কব্জি লম্বালম্বি ভাবে ঢুকে রয়ে যায়, যে অংশটির প্রস্থ ২ সেন্টিমিটারের কম। ফলে সেনসরে বাধা হয় না, চালকও পেয়ে যান সিগন্যাল। সেই কারণেই ট্রেন চালু করে দেন তিনি। কিন্তু সজলবাবুর হাতের কব্জি যদি একটু মোটা হত, তবে পাওয়ার পেত না মেট্রো। এই বিপর্যয় এড়ানো যেত।
No comments:
Post a Comment